৫ অগাস্ট ২০১২, ২১ শ্রাবণ ১৪১৯
আওয়ামী
লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন,
অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা ঠিক করতে বিএনপি আলোচনার ইতিবাচক মনোভাব
প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগ সংলাপে বসতে প্রস্তুত রয়েছে। এ বিষয়ে তারা সংসদে
যৌক্তিক দাবি নিয়ে এলে দেশ ও জনগণের কল্যাণে তা মেনে নেয়া হবে। অন্তর্বর্তী
মন্ত্রিসভা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রস্তাব দিয়েছেন সে
ব্যাপারে বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দেবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সরকারের এ
প্রস্তাব িসম্পর্কে তাদের পরিষ্কার ধারণা নেই বলেই তারা বিরোধিতা করছেন।
আমরা রাজনীতিবিদরা অনেক সময় অনেক সিদ্ধান্ত নেই। আবার সেই সিদ্ধান্ত
বাস্তবতা বুঝে পরিবর্তন করি। তারা হয়তো বাস্তবতা বুঝতে পারবে। নিজেরা
আলোচনা করে ভুল বুঝতে পেরে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সাড়া দেবেন।
গতকাল
শনিবার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে মাহবুব-উল-আলম
হানিফ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না এমন সিদ্ধান্তে যদি
বিএনপি অটল থাকে তাহলে আলোচনার ব্যাপারে আমাদের দিক থেকে আনুষ্ঠানিক
প্রস্তাব দেয়ার সুযোগ কম থাকে। বিএনপি আগে প্রস্তাব দিলে আমরা দেশের
মানুষের মঙ্গলের জন্য যেকোন যৌক্তিক প্রস্তাব মেনে নিতে পারি।
হানিফ
বলেন, বিগত তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনোটি প্রশ্নাতীত ছিলো না। যে দল
যখন পরাজিত হয়েছে সেই দলই প্রশ্ন তুলেছে। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার
চুক্তি ছিল তিন টার্মের জন্য। সে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন,
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার হাওয়া ভবনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাট
করেছে। আর সে টাকা দিয়ে লন্ডনে বসে তারেক রহমান কোটি কোটি টাকা খরচ করে
আরাম-আয়েশে দিন কাটাছেন এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছেন। তিনি তো
ব্যবসা করেননি। তার কোনো টিন নম্বরও ছিল না। তিনি কোনো ট্যাক্সও দেননি।
হানিফ বলেন, বিরোধী দলীয় নেত্রীর দুই ছেলের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ
খুবই লজ্জাকর। তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলার বিচার ও
শাস্তি এই সরকারের আমলেই হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের
বিচার প্রসঙ্গে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী
লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার। যদিও এ বিচার খুবই জটিল কাজ। ৪০ বছর আগের ঘটনা
সাক্ষীসহ নানা জটিলতা রয়েছে। তারপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ এগিয়ে চলছে।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আটককৃতদের বিচার সম্পন্ন করা হবে। আর এই সরকারের
মেয়াদকালের মধ্যেই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হবে।
তিনি
বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, নোবেল বিজয়ীরা আইনের ঊর্ধ্বে
নয়। যে যত বড় সন্মানী ব্যক্তিই হোক আইন সবার কাছে সমান। সাবেক দুই
প্রধানমন্ত্রীকে কী আইনের আওতায় আনা হয়নি! আমেরিকায় দুজন নোবেল বিজয়ীকে
আইনের আওতায় আনা হয়েছিল। তিনি বলেন, সরকার গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস করছে না
বরং ৮৬ লাখ গ্রাহকের ২৯ হাজার কোটি টাকা নিয়ে কোন অনিয়ম হয়েছে কি না তা
জনগণকে জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
মাহবুব-উল-আলম
বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেক মানুষ আত্মহত্যা করেছে, কেউ রিকশা
চালাচ্ছে, কেউবা বুয়ার কাজ করছে। তাহলে তিনি দেশের কাজ করলেন কিভাবে? অপর
এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, ৩ কোটি টাকা নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের
কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো। এরমধ্যে সরকারের ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ। এখন গ্রামীণ
ব্যাংকের অর্থের পরিমাণ ২৯ হাজার কোটি টাকা। গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রাহক
সংখ্যা ৮৬ লাখ। এই ৮৬ লাখ মানুষ কি এই টাকার মালিক? মিডিয়াতে সাক্ষাত্কারে
ড. ইউনুস নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি বিদেশে টাকা পাঠিয়েছেন, কোনো ট্যাক্স
দেননি। হানিফ বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা দিয়ে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান করেছেন ড.
মুহাম্মদ ইউনূস। এগুলো কার নামে চলছে? ট্যাক্স দিচ্ছে কিনা। সরকার তো কারো
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। সরকার তদন্ত করছে। তিনি বলেন, আমরা যেমন গর্বিত
জাতি একইভাবে ড. ইউনুস বিশ্বের বুকে আমাদের ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে পরিচিত
করিয়েছেন। র্যাব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত জোট
সরকার র্যাবকে দলীয় কাজে ব্যবহার করেছে। আর এখন র্যাব সন্ত্রাস দমনে কাজ
করছে।
সাংবাদিক
নির্যাতন প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, সরকারের আমলে কয়েকটি বিছিন্ন ঘটনা ঘটেছে।
এসবের দোষ সরকারের ওপর চাপানোর চেষ্টা চলছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে বর্তমান
সরকার কোনোভাবেই জড়িত না। এসব ঘটনার তদন্ত চলছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সাংবাদিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment