Wednesday, August 1, 2012

বাঙালির শোকের মাস -আগস্ট

১৫ আগস্ট- জাতীয় শোক দিবসসহ শোকাবহ আগস্ট পালনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মাসব্যাপী নানা কর্মসূচী।   ১লা জুলাই,২০১২

flagবাঙালি জাতির ইতিহাসে শোকের মাস- আগস্ট। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধূর শোকের দিন বর্ষ পরিক্রমায় আবার বাঙালি জাতির দ্বারে সমাগত। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মানবতার দুশমন প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকদের হাতে আবহমান বাংলা ও বাঙালির আরাধ্য পুরুষ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন সেদিন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী নীরবে-নিভৃতে যিনি প্রেরণা যুগিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা ও বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ ফুটবলের আধুনিকতার স্রষ্টা, আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা ও সাংস্কৃতিক জগতের অন্যতম পুরোধা শেখ কামাল, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পুত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত বীর সেনানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল, বঙ্গবন্ধুর আদরের কনিষ্ঠ পুত্র নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল, জাতির জনকের নবপরিণীতা পুত্রবধূ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ব্লু' উপাধিপ্রাপ্ত দেশসেরা অ্যাথলেট সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক কৃষক নেতা জাতির জনকের ভগ্নিপতি তাঁর মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্ব বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এই ঘৃণ্য নরপশু, কাপুরুষ হায়েনাদের বর্বরতা থেকে শিশু-নারী কেহই রেহাই পায়নি। ক্ষণজন্মা যে পুরুষ জাতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার উজ্জ্বল পতাকা; কিন্তু ঘাতকের বুলেটে তিনি পেয়েছেন নির্মম প্রতিদান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে জাতীয় ও আন-র্জাতিক চক্রান্ত কারীদের পদলেহী ঘাতকগোষ্ঠী বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতাকে, তথা বাঙালির সকল মহতী আকাঙ্ক্ষাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। মুছে ফেলতে অপপ্রয়াস চালিয়েছে বাঙালির বীরত্বগাঁথা ইতিহাস। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে পাকিস্তানি সামপ্রদায়িক ধারা পরাভূত হয়েছিল তাই আবার যেন পুনর্জন্ম লাভ করেছিল। মূলতঃ তাদের উদ্যত সঙ্গীন আমাদের সুমহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাঙালির হাজার বছরের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সভ্যতা, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ ও অর্থনৈতিক মুক্তির সোনালী শুভ গণমুখী পদক্ষেপগুলোকে স্তব্ধ করার হীন উদ্দেশ্যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে নস্যাৎ করার প্রয়াসে এবং সমাজ প্রগতির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্যই এই আঘাত হেনেছিল।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ অবধি ধারাবাহিক সংগ্রামের ভিতর দিয়ে যে বাংলাদেশ তৈরি হয়েছিল ঐ বাংলাদেশকে তার মূল রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় চেতনা থেকে বিচ্যুত করে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতির চাকাকে মূলতঃ থামিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশের সংবিধানকে তারা ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত চেতনার বিপরীতে নিয়ে যায়। শেষ অবধি তারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে যেখানে নিয়ে যায় ঐ সংবিধানের চেতনার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের কোন চেতনাগত ও নৈতিক মিল থাকে না। বাংলাদেশের সংবিধানের জননী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র আর এই ঘোষণাপত্রের উৎস ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ অবধি বাঙালি জাতির সংগ্রামের চেতনা। আর এই চেতনার শীর্ষবিন্দু ও একক রক্ষকে পরিণত হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁকে বাঁচিয়ে রেখে কোনমতেই এই চেতনা থেকে বাঙালি জাতি ও তার জাতিক রাষ্ট্রটিকে বিচ্যুত করার কোন পথ শত্রুদের হাতে ছিল না। এ কারণেই ঘটানো হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মর্মন'দ হত্যাযজ্ঞ।
বাঙালির শুভ চেতনা, সামনে এগিয়ে চলা প্রগতির জয়যাত্রাকে বাঁধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। লক্ষ প্রাণের রক্তমূল্যে অর্জিত স্বাধীনতার চার মূলনীতি বিসর্জন দিয়ে একদলীয় শাসনের নগ্ন প্রকাশের মাধ্যমে জাতি ও রাষ্ট্রকে পঙ্কিলতার আবর্তে নিক্ষেপ করেছিল। বাঙালির সকল ইতিবাচকতাকে তারা হত্যা করেছিল। নারী-শিশু নির্বিচারে হত্যা করে তারা মানব ইতিহাসে এক জঘন্য কলঙ্কতম হত্যাকাণ্ডের নজির স্থাপন করেছিল। এই নরপিশাচের দল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ভাবাদর্শ ও উত্তরাধিকারকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে অপসারণের মধ্য দিয়ে এই দেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চালু হয়। গণতন্ত্রকে পাঠানো হয় নির্বাসনে। প্রতিষ্ঠিত হয় স্বৈরশাসন; প্রতিক্রিয়া ও সামপ্রদায়িকতার বিষ-বৃক্ষ, যা আমাদের আত্মপরিচয় ক্রমশঃ বিলীন ও শৃঙ্খলিত করার সুগভীর চক্রান্তের র অংশ ছিল। তাই এখন ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য যেমন জাতির জনকের কাছে সশ্রদ্ধচিত্তে মাথা নম্র করার দিন, তেমনি তাঁর আদর্শকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বাস-বায়ন করার শপথ নেবারও দিন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকারী আত্মস্বীকৃত খুনির দল মোশতাক, ফারুক, রশিদচক্র হত্যাকাণ্ডের দায়ভার থেকে মুক্তি লাভের কাপুরোষিত হীনউদ্দেশ্যে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। অবৈধ ক্ষমতা দখলদার সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান লাখো শহীদের রক্তমূল্যে অর্জিত সংবিধানকে বুটের তলায় পিষ্ট করে পঞ্চম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে আইনে পরিণত করে আইনের শাসনের হাত থেকে খুনিদের রেহাই দেয়। নিরাপদে দেশত্যাগের ব্যবস্থা করে। জাতির জনকের হত্যাকারীদের রাজনীতি ও প্রশাসনে পুনর্বাসন করেন। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহের কূটনীতিকের চাকরিদানের মধ্য দিয়ে পুরস্কৃত করেন। মৌলিক মানবাধিকার ও আইনের শাসনের কবর রচনা করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। আইনের শাসনকে আপন গতিতে চলতে দেয়নি। বরং অন্যায় অপরাধীদের প্রশ্রয় দিয়েছে, লালন করেছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে কায়েম করে সামরিক স্বৈর একনায়কতন্ত্র।

No comments:

Post a Comment