Wednesday, July 11, 2012

অমূল্য সম্পদ জাতির হাতে তুলে দিলাম, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অমূল্য দলিল: আলোচনাসভায় বক্তারা

মঙ্গলবার | ১০ জুলাই ২০১২ | ২৬ আষাঢ় ১৪১৯

স্বাধিকার আন্দোলনের নেতা হিসেবে মাঠের বক্তৃতা, জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে দৃপ্ত কণ্ঠে বাঙালির স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তি সংগ্রামের ডাক কিংবা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে জাতির উদ্দেশে ভাষণ_ এসবের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচয় দেশের মানুষের কাছে, বিশ্বসভায়। কিন্তু রাজনৈতিক জীবনের বাইরেও বঙ্গবন্ধুর ছিল একটি ব্যক্তিগত জীবন। ব্যক্তিগত অনুভূতি, আবেগ_ সবকিছুর ভেতরে তিনি তাড়িত হতেন, রোমান্টিক চোখে সবুজ প্রকৃতি দেখতেন। স্বামী হিসেবে স্ত্রীর জন্য প্রেম, পিতা হিসেবে সন্তানের জন্য স্নেহ, জননেতা হিসেবে মানুষের জন্য একান্ত ভাবনায় কীভাবে আলোড়িত হতেন মহাপ্রাণ বঙ্গবন্ধু_ তা এতদিন সবার কাছেই অজানা ছিল। সেই অজানা অধ্যায় এবার জনসাধারণের কাছে মূর্ত হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থে। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে জেলে

কারাবন্দি থাকা অবস্থায় তিনি নিয়মিত নিজের একান্ত আবেগ-অনুভূতির কথা লিখতেন। আর সেই লেখা খাতাগুলো সযত্নে সংরক্ষণ করতেন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর সেসব লেখাই স্থান পেয়েছে 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থে। বঙ্গবন্ধুর এই লেখার সাহিত্যমান সম্পর্কে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের অভিমত, বঙ্গবন্ধুর গদ্য অসাধারণ, তার এই লেখা বিশ্বসাহিত্যের শীর্ষস্থানীয় আত্মজীবনীগুলোর মতোই অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে। গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এ গ্রন্থ সবার সামনে উন্মুক্ত করে ঘোষণা করলেন, 'জাতির অমূল্য সম্পদ জাতির হাতে তুলে দিলাম।'


সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক ড. মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, বেবী মওদুদ এমপি, গ্রন্থের প্রকাশক ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দিন আহমেদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার এবং গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদক অধ্যাপক ফকরুল আলম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নূহ উল আলম লেনিন। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থটি একই সঙ্গে ইংরেজি ভাষায় ভারত থেকে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা 'পেঙ্গুইন' এবং পাকিস্তানে 'অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস' প্রকাশ করেছে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের জেলে বসে লেখা খাতাগুলো খুব যত্নে সংরক্ষণ করতেন। বঙ্গবন্ধু যতবার জেলে যেতেন, ততবারই ফজিলাতুন্নেসা মুজিব তাকে মোটা লাইন টানা খাতা দিয়ে আসতেন। বঙ্গবন্ধু জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় আবার সেই খাতাগুলো নিজে তদারকি করে নিয়ে আসতেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তার লেখা খাতাগুলো ৩২ নম্বরের বাড়িতেই ছিল। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে এলেও শেখ হাসিনাকে জিয়া সরকার ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। ১৯৮১ সালের ১২ জুন সাত্তার সরকার তাকে ৩২ নম্বরের বাড়ি হস্তান্তর করে। তখন সেখানে বঙ্গবন্ধুর লেখা 'স্মৃতিকথা', 'ডায়েরি' এবং 'চীন ভ্রমণের' খাতাগুলো পেলেও আত্মজীবনী লেখা চারটি খাতা তিনি পাননি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর তার ফুফাতো ভাইয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে লেখা আত্মজীবনীর খাতাগুলো তার হাতে আসে। এগুলো বাংলার বাণী অফিসে শেখ ফজলুল হক মনির ড্রয়ার থেকে পাওয়া গিয়েছিল। এই লেখা হাতে আসার পর থেকেই তা গ্রন্থাকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেন তিনি। আরও দু'বছর আগে ইউপিএলকে পাণ্ডুলিপি দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত দু'বছর পর তা প্রকাশ হলো। শেখ হাসিনা বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর এই লেখাগুলো ইতিহাসের দলিল, জাতির অমূল্য সম্পদ। এগুলো আমি জাতির হাতেই তুলে দিলাম।' তিনি জানান, আগামীতে বঙ্গবন্ধুর লেখা 'স্মৃতিকথা' এবং 'চীন ভ্রমণ'ও প্রকাশ করা হবে।


বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা বলেন, 'ছোটবেলায় আব্বার লেখা এই খাতাগুলো দূর থেকে দেখেছি। কিন্তু এগুলো কখনও ধরার সাহস আমাদের ছিল না। আসলে '৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর অশ্রু ছাড়া আমাদের দু'বোনের আর কিছুই ছিল না। পরে যখন আব্বার লেখাগুলো পেলাম, তখন সেগুলোই যেন জীবনের পরম সম্পদ হয়ে গেল। লেখাগুলো পড়লে মনে হতো, আব্বা কথা বলছেন, আমাদের ভালোমন্দ পরামর্শ দিচ্ছেন। তার ছোঁয়া পেতাম লেখাগুলোর ভেতরে।' তিনি বলেন, এর লেখাগুলোর মধ্যে ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকের অজানা অধ্যায় উঠে এসেছে। তিনি অকপটে সত্য লিখেছেন। এই লেখাগুলো পড়লে জাতি ইতিহাসের অনেক অজানা সত্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। শেখ রেহানা বক্তৃতার এক পর্যায়ে পিতাকে চিরবিদায়ের মুহূর্তে শেষ দেখার সুযোগ না পাওয়ার শোকে বিহ্বল হয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেরই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। বক্তৃতা শেষ করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট বোনকে গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরেন। শেখ রেহেনা কেঁদে ফেলেন।


মুস্তাফা নূরউল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো এত বড়মাপের একজন নেতা সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে এবং গবেষণার প্রয়োজনে এ গ্রন্থটি অপরিহার্য বিবেচিত হবে।


সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক ইতিহাস লেখা হয়েছে। কিন্তু এই গ্রন্থের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর লেখায় ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাবে।








সূত্র



বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

No comments:

Post a Comment