পছন্দের কোম্পানিকে কাজ না দেয়ায় ঋণ বাতিল করে বিশ্বব্যাংক, সাংবাদিকদের সাথে ইফতারে শেখ হাসিনা
বৃহস্পতিবার | ২৬ জুলাই ২০১২ | ১১ শ্রাবণ ১৪১৯
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পছন্দের বিদেশি কোম্পানির পক্ষে বিশ্বব্যাংকের অব্যাহত চাপ অগ্রাহ্য করার কারণেই পদ্মাসেতু ঋণচুক্তি বাতিল হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একটি বিদেশি কোম্পানিকে পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে বাংলাদেশের উপর বিশ্বব্যাংকের ওই চাপের বিনিময় পার্সেন্টেজ কত ছিল এটি যদি আমরা জানতে চাই তা কি খুব অন্যায় হবে? বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় (লন্ডন সময় রাত ৯টা) কেন্দ্রীয় লন্ডনের সেন্ট প্যাংক্রাস রেনেসাঁ হোটেলে লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে ইফতার পরবর্তী প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। ইফতার মাহফিলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিও উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল-পরবর্তী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরির ঘোষণার পর ''সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের পদত্যাগ কি সরকারের পিছুটান?'এ প্রশ্ন করা হলে জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ''অবশ্যই না। আমরা বলেছি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু আমরা করবো।'' ''এরই মধ্যে এর প্রাথমিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে'' উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '' আমাদের এই প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়ে কোনো সংস্থা যদি পদ্মাসেতুর জন্যে ঋণ দিতে চায়, সেটি আমরা অবশ্যই গ্রহণ করবো। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের পদত্যাগকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরীর ঘোষণা থেকে পিছুটান হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই। '' প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ''বিশ্বব্যাংক আমাদের এমনি এমনি ঋণ দেয় না। এই ঋণের বিনিময়ে আমাদের কাড়ি কাড়ি সুদ দিতে হয়।''
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ''পদ্মাসেতু প্রকল্পে এরই মধ্যে আমরা দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। এগুলো বিশ্ববাংক দেয়নি। আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকেই তা করেছি। নিজস্ব উদ্যোগেই আমরা পদ্মাসেতু তৈরির কথা বলেছি- প্রাথমিক প্রক্রিয়াও শুরু করেছি।'' 'বিশ্বব্যাংক এ পর্যায়ে এসে আবারে ঋণ দেবে কিনা, এটি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়।''--একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বোলেন, '' আমরা তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নেই। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাবো। ঋণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্যে তাঁর সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছে কোনো আবেদন করেনি।''
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ করলেই আমরা তা গ্রহণ করতে পারি না। একটি বিদেশি কোম্পানিকে পরামর্শক নিয়োগের জন্য চাপ সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী গ্রহণ করেননি। এটিই যদি ঋণ চুক্তি বাতিলের কারণ হয়, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।''
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ''শুধু পদ্মা সেতুর ঋণই বাতিল নয়- এর আগে ২০০৫ সাল থেকে আরও কয়েকটি ঋণচুক্তি বাতিল করেছে বিশ্বব্যাংক। বিএনপি সরকারের আমলে একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঋণ চুক্তিও বিশ্বব্যাংক বাতিল করে।''সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের পদত্যাগকে স্বাগত জানানোর পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ''এর আগের সরকারের আমলেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। আসলে ময়লা কাপড়ে দাগ লাগলে কারো চোখে পড়ে না। কিন্তু সাদা কাপড়ে সামান্য দাগ পড়লেও তা সবার চোখে পড়ে।আমাদের হয়েছে এই অবস্থা।''
''আগের সরকারের দুর্নীতির পাহাড় থাকার কারণে কেউই এগুলো নিয়ে খুব মাতামাতি করতেন না। আর আমাদের সরকারের আমলে দুর্নীতির মাত্রা এতই কম বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় থাকায় একটা কিছু উনিশ-বিশ হলেই সবাই হৈ-হল্লা শুরু করেন।''
দেশপ্রেম আছে বলেই আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ''একমাত্র তাঁর নাম আসার কারণে দেশের ক্ষতি হচ্ছে- এই বিবেচনা থেকেই আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছেন বলে আমার ধারণা।''
''আগের সরকারের কয়জন মন্ত্রীর এমন ব্যক্তিত্ব ছিল?'' --এই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ''আবুল হোসেনের দেশপ্রেমের প্রশংসা করা উচিত।''
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধের বিচার পসঙ্গে বলেন, ''স্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এই বিচার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। সরকার তো আর এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এই বিচার দ্রুত শেষ করতে এরই মধ্যে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। সুতরাং যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে গেছে বলা ঠিক নয়।''
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের শাসনামলে উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিবরণ তুলে ধরেন সাংবাদিকদের সামনে। তিনি বলেন, ''১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ দেশের যে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছিল পরবর্তী সরকারগুলো তা ধরে রাখতে পারেনি।''
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল বিএনপি-জামাত জোট সরকার এবং পরবর্তী সময়ে ২০০৬ থেকে ২০০৮ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশকে ব্যাপকভাবে পিছিয়ে দিয়েছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ''বর্তমান সরকারের সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশ আবারও উঠে দাঁড়িয়েছে। ''
তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামাতের আমলে দেশ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভয়ারন্য ছিল। এই অবস্থা আজ আর নেই। বিদ্যুৎ, খাদ্য নিরাপত্তা বিবিধ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম। প্রতিটি থানায় ইন্টারনেট সংযোগের কথা বলেছিলাম। শুধু থানায় নয়- দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের মানুষ আজ ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাড়ে তিন বছরে আমাদের সরকার দেশের দারিদ্র হ্রাস করেছে ১০ শতাংশ। এই ১০ ভাগ মানুষ এখন নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ৮৪৮ মার্কিন ডলার।
দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধি এখন ৬ শতাংশের ওপরে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা কি- বাংলাদেশ তা টের পায়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে, বাড়ছে স্বাক্ষরতার হার।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাই, এই সংগ্রামই আমাদের চলছে এখন। তিনি বলেন ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করেছি, ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে এখন কাজ করছে বর্তমান সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাংবাদিকদের ইফতার মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড: সাইদুর রহমান খান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক, যুগ্ম সম্পাদক মারুফ চৌধুরী, নঈমুদ্দিন রিয়াজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, শাহাব উদ্দিন চঞ্চল, যুক্তরাজ্য যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জামাল খান প্রমুখ।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
No comments:
Post a Comment