২০ জুলাই ২০১২, ৫ শ্রাবণ ১৪১৯
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও আগামী জাতীয় নির্বাচন সেভাবেই হবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই ক্ষমতায় যাবে। বর্তমান সরকারের আমলে উপ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউপিসহ প্রায় ৫ হাজার ২২৬টি নির্বাচন সম্পন্ন করেছে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সবগুলো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। একটি নির্বাচন নিয়েও কোন প্রশ্ন ওঠেনি। পদ্মা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতি করে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা দেশকে উন্নত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবো। গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে কৃষক লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে লুটপাটে ব্যস্ত থাকে। জণগণের কল্যাণ নয়, তারা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ন বিএনপি শুধু ভাঙতে জানে, গড়তে নয়। দেশে কোনো উন্নয়ন তারা করতে পারেনি। দুর্নীতি, লুটপাট সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করাই ছিল তাদের কাজ। বিএনপি সরকার আমলে সার চাইতে গিয়ে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে পাখির মতো হত্যা করা হয়। বিদ্যুত্ চাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষকে তারা হত্যা করেছে। পবিত্র রমজান মাসে তারা শ্রমিকদের হত্যা করে।
'বর্তমান সরকারের আমলে যা কিছু হয়েছে সবকিছু বাতিল করে দেয়া হবে' মর্মে বিরোধী দলীয় নেত্রীর দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কঠোর হস্তে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি, তিনি (খালেদা জিয়া) এসে কী আবারো দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ- লুটেরাদের রাজত্ব কায়েম করবেন? আমরা বন্ধ কল-কারখানা চালু করেছি, তবে কি তিনি এসব কারাখানা আবার বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকের পেটে লাথি মারবেন? আমরা শিক্ষার হার বাড়িয়েছে, তিনি তা কমিয়ে দেবেন? তিনি বলেন, বৃত্তশীলদের তেলা মাথায় তেল দিতে চাই না। গ্রামের মানুষ যাতে উন্নত জীবন পায় সেই লক্ষ্যে তার সরকার কাজ করছে। কৃষক লীগ নেতা-কর্মীদের কৃষকদের সমস্যা চিহ্নিত করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় পরিবেশন করা হয় জাতীয় সঙ্গীত। পরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ সময় সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সভাপতি ড. মির্জা জলিল। এরপর আধুনিক প্রযুক্তি এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনে নির্মিত মঞ্চের দিকে প্রধানমন্ত্রী ধীরে ধীরে এগিয়ে আসলে তুমুল করতালি, গগণবিদারী শ্লোগান আর পুষ্পবর্ষণের মধ্যদিয়ে তাকে বরণ করে নেয়া হয়। শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাজ পরিয়ে দেয়া হয়, ফুল, ক্রেস্ট ও কৃষক লীগের প্রকাশনা 'কৃষকের কণ্ঠ' প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেয়া হয়। কৃষক লীগের এই সম্মেলনকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ ও এর আশপাশ এলাকায় রীতিমত উত্সবমুখর পরিবেশের সূচনা ঘটেছিল। সারাদেশ থেকে আগত হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে রীতিমতো মিলনমেলায় পরিণত হয়।
কৃষক লীগের সভাপতি ড. মির্জা জলিলের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, অল ইন্ডিয়া কৃষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক অতুল কুমার অঞ্জন, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মোল্লা প্রমুখ। শোক প্রস্তাব করেন সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক ভৌতম ব্যানাজি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।বেগম মতিয়া চৌধুরী ইউরিয়া সারের দাম বাড়ার কারণ তুলে ধরে বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে উত্পাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে ইউরিয়া। তবে আমরা টিএসপি সারের দাম কমিয়েছি। ইউরিয়া মূলত জিন্স প্যান্ট ও চাল সাদা করার কাজে ব্যবহূত হয়। টিএসপিকে কৃষকের মাছ মাংস হিসেবে অবিহিত করে তিনি বলেন, আমরা কৃষকদের জন্য যেটা বেশি প্রয়োজন সেটার দাম কমিয়েছি।
সর্বভারতীয় কিষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক অতুল কুমার অঞ্জন বলেন, চাষিদের উন্নয়ন বাদ দিয়ে শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ড. মির্জা জলিল উপস্থিত কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বলেন, দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন কমিটির বিষয়ে আমরা কোনো আলোচনা করতে চাই না। এটা ছেড়ে দিলাম নেত্রীর ওপর। তিনি যাকে ঠিক করে দেবেন, তার সঙ্গে মিলে মিশে কাজ করব। কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মোল্লা কৃষকদের উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিকাল সাড়ে ৪টায় কাউন্সিলারদের নিয়ে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মোল্লা সাংগঠনিক রিপোর্ট তুলে ধরেন।
কৃষক লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শামসুল হক রেজা, বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কৃষক লীগের সম্মেলনে নতুন কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
No comments:
Post a Comment