Wednesday, July 18, 2012

নিজস্ব অর্থেই পদ্মা সেতু হবে বিশ্ব দেখবে আমরাও পারি



বুধবার, ১৮ জুলাই ২০১২, ৩ শ্রাবণ ১৪১৯
 শ্রমিক লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজেদের অর্থেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বাবাসীকে দেখিয়ে দেবো যে, আমরাও পারি। আমরা কারো কাছে ভিক্ষা-খয়রাত চাই না, হাত পাততে চাই না, হতে চাই স্বনির্ভর। আমরা গর্বিত জাতি, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আত্মসন্মানবোধ আমাদের সম্পদ। এ জাতির ওপর অহেতুক কালিমা লেপন বরদাশত করা হবে না। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পক্ষে মানুষের মধ্যে যে ব্যাপক চেতনা জাগ্রত হয়েছে, সেটাই আমাদের বড় শক্তি। অর্থের সংকুলান আমরা করতে পারবো ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে আমরা হত দরিদ্রদের বিনামূল্যে খাবার খাওয়াবো। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে পরিমাণ খাদ্য উত্পাদন বাড়িয়েছে, তাতে এ মাসে দরিদ্রদের বিনামূল্যে খাওয়ালে কোনো সমস্যা হবে না।

গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে জাতীয় শ্রমিক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি জেনেশুনে দেশকে সর্বনাশ করে গেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বন্ধ কারখানা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে গিয়ে আদমজী পাটকলসহ শিল্প-কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকের পেটে লাথি মেরেছে। বিএনপি আদমজী পাটকল বন্ধ না করলে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পাটের বাজার আরো বড় হতো। ৫৭ জন শ্রমিককে তারা হত্যা করে। দেশের জন্য কোনো কল্যাণ নয়, ক্ষমতায় থেকে লুটপাট, সন্ত্রাস চালিয়েছে। বাংলা ভাইসহ জঙ্গিদের মদদ দিয়েছে তারাই। শিক্ষার হার ৬৫ ভাগ থেকে ৫০ ভাগে নামিয়ে আনে। নিজে পাস করেননি বলে অন্যরাও পাস করুক এটা বিএনপি নেত্রী চান না। বিদ্যুত্ উত্পাদন বৃদ্ধি তো দূরের কথা, বরং তারা কমিয়েছে। আমরা এবার ৩ হাজার ৮শ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুত্ উত্পাদন করেছি। ১৯৯৬ সালে আমাদের রেখে যাওয়া ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাড়িয়ে ৪০/৪৫ টাকা করে। এবার আমরা চালের দাম কমিয়ে ২৫/৩০ টাকায় নিয়ে এসেছি। বিশ্ব মন্দার পরেও আমরা অর্থনীতিকে মজবুত রাখতে সক্ষম হয়েছি, তাদের আমলে ১২-১৩ ভাগ মূল্যস্ফীতি আমরা ৭/৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ১০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বাড়িয়েছি। পাট আবার সোনালি আঁশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে- এটাকে ধরে রাখতে চাই। ৭ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেশকে পিছনে নিয়ে যায়। মানুষ সবসময় সামনের দিকে হাঁটে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কার পা পেছনে থাকে? নিজেই এর উত্তর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূতের পা পেছনে থাকে। এ কারণে বিএনপিকে জনগণ আর কখনো ক্ষমতায় আনবে না।
বর্তমান সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে ওই সব বন্ধ কারখানার ঋণ মওকুফ করে দিয়ে চালু করেছি। এসব কারখানায় উত্পাদন বাড়াতে হবে। যাতে এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তিনি বলেন, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ কৃষক-শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এবার ক্ষমতায় এসে শ্রমিকদের বেতন ভাতা বাড়িয়েছে। আমি নিজে মালিকদের চাপ দিয়ে এক হাজার ৫শ টাকার বেতন তিন হাজার টাকা করেছি। মজুরি কমিশন ঘোষণা করেছি, সর্বনিম্ন মজুরি দুই হাজার ৫শ টাকা থেকে চার হাজার ৫শ টাকা করেছি। শ্রমিকের চাকরির বয়সসীমা ৬০ বছরে উন্নীত করেছি। কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি- যেখান থেকে বিনা জামানতে এক লাখ টাকা ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নীতি হলো উত্পাদন বাড়িয়ে দেশকে স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ করা, বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করা। আর বিএনপির নীতি হলো নিজেদের আখের গুছিয়ে দেশকে পিছিয়ে দেয়া। কারখানা বন্ধ করে পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকা। শ্রমঘন শিল্প আরো গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি বলে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশে এসেছে। শ্রমিকদের আরো মনোযোগ দিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের উত্পাদন বাড়াতে হবে। মনযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে, যেন আমরা রপ্তানি বাড়াতে পারি।
'বর্তমান সরকারের আমলে যা কিছু হয়েছে সবকিছু বাতিল করে দেয়া হবে' মর্মে বিরোধী দলীয় নেত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রশ্ন রাখেন, আমরা বন্ধ কল-কারখানা চালু করেছি, তবে কি তিনি এসব কারখানা আবার বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকের পেটে লাথি মারবেন? আমরা কঠোরহস্তে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি, তিনি এসে কী আবারো দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-লুটেরাদের রাজত্ব কায়েম করবেন? বাংলা ভাই, বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা, দুর্নীতি করে বিদেশে অর্থ পাচারের রাজত্ব আবারো কায়েম করতে চান? নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পক্ষে জনসমর্থনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে ফোন করে এক গৃহিণী তার খরচের টাকা বাঁচিয়ে পদ্মা সেতুতে অর্থ দিতে চেয়েছেন। এক স্কুল শিক্ষার্থী তার যাতায়াতের খরচ বাঁচিয়ে টাকা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মূলত পদ্মা সেতু নিয়ে দেশব্যাপী গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে ১১টা ২২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ এ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টার। এরপর আধুনিক প্রযুক্তি এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনে নির্মিত মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী উঠলে তুমুল করতালি, গগনবিদারী শ্লোগান আর পুষ্পবর্ষণের মধ্যদিয়ে তাকে বরণ করে নেয়া হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও পদ্মা সেতু নিয়ে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফকির আলমগীরের নেতৃত্বে একদল শিল্পী। 'বাঙ্গালিরা বীরের জাতি, সইবো কেন বিশ্ব ব্যাংকের এমন অপমান' এমন সঙ্গীত পরিবেশের সময় হাজার হাজার শ্রমিক করতালি দিয়ে বিষয়টির প্রতি সমর্থন জানায়। সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল ও নৌকার প্রতিকৃতি ক্রেস্ট উপহার দেয়া হয়। শ্রমিক লীগের এই সম্মেলনকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও এর আশপাশ এলাকায় রীতিমতো উত্সবমুখর পরিবেশের সূচনা ঘটেছিল। সারাদেশ থেকে আগত হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে রীতিমতো মিলনমেলায় পরিণত হয়। প্রবল বর্ষণের মধ্যেও সমবেত এসব নেতাকর্মীর পাশাপাশি আমন্ত্রিত অতিথি ও মানুষের উপস্থিতিতে সম্মেলনস্থল ছাড়িয়ে সংলগ্ন সড়কগুলোতেও ছিল উপচেপড়া ভিড়। সংগঠনের পদপ্রত্যাশীদের শোডাউনও ছিল দেখার মতো। কাকভেজা হয়েও দিনভর সম্মেলনকে মুখরিত করে রাখে হাজার হাজার নেতা-কর্মী।
জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টারের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, শ্রমিক নেতা ডা. ওয়েদুল ইসলাম খান, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর এন্ড্রে বগি, আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ চন্দ্র প্রমুখ। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক হুমায়ুন কবির। মঞ্চে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও পরাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি উপস্থিত ছিলেন।


                      বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

                                                                                        জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু

No comments:

Post a Comment