Friday, July 13, 2012

আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে, কোন দুর্নীতি করিনি :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই ২০১২, ২৮ আষাঢ় ১৪১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আবারো বলেছেন, আমরা নিজেদের টাকায়ই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবো। কেননা আমরা দুর্নীতি করে অর্থ সম্পদ বানাতে আসেনি। কোন দাতা সংস্থা কিংবা কোন দেশ ঋণ নিয়ে এগিয়ে আসলে সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। আমরা ঋণ নেবো, সুদসহ ফেরতও দেব। কিন্তু কারো কাছে ভিক্ষা করবো না। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে, আমরা কোন অন্যায় করিনি। জনগণও এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছে বলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিশ্বব্যাংককে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের অনেক শক্তি আছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তাই এদেশের জনগণ অতীতে যেমন কারো কাছে মাথা নত করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। তিনি প্রশ্ন রেখে

বলেন, কার খাতিরে তারা (বিশ্বব্যাংক) বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করলো। যেখানে কোন অর্থই ছাড় দেয়া হয়নি, সেখানে দুর্নীতি হয় কীভাবে? যারা ভেবেছিল পদ্মা সেতুর দুর্নীতির কথা বলে সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করা যাবে, তাদের ধারণা যে কত বড় ভুল ছিল তা প্রমাণ হয়েছে। বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে উল্টো দেশের মানুষ যেন সরকারের পক্ষে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতই আবার জেগে উঠেছে। একই সঙ্গে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেশবাসী জাগ্রত হয়েছে।



প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে ১০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বাড়িয়েছে। এক বিলিয়ন ডলার সেখান থেকে খরচ করা কোন ব্যাপারই নয়। এটিও একবারে নয়, বছরে বছরে খরচ করা হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে অপরাধ ও অন্যায় আমরা করিনি তার অপবাদ দেয়া হলে কোন অবস্থায়ই তা মেনে নেয়া হবে না। পদ্মা সেতু বিষয়ে কোন অপরাধ করলে সেটা জনগণ জানতে পারত। কেননা অপরাধ করলে সেটা মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা যায় না। তাদের কাছে সব তথ্যই চলে যায়, কোন কিছুই আর গোপন থাকে না। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে দেশের জনগণের অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ফোন ও ই-মেইল থেকেও স্পষ্ট বোঝা যায়, জনগণ সরকারের সঙ্গেই রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি আজ দুর্নীতির কথা বলছে। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত, দুর্নীতির দায়ে বিশ্বব্যাংকের ঋণ তাদের সময়ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুত্ ও যোগাযোগ খাতের ৭টি প্রকল্পের অর্থায়ন বিশ্বব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছিল। যারা চোর, তারা অন্যদেরও চোরের দৃষ্টিতে দেখবে এটাই স্বাভাবিক। কেননা তারা ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি-লুটপাট ছাড়া অন্য কিছু করেননি। চুরি-দুর্নীতি ছাড়াও যে কাজ করা যায় এটা বিএনপির লোকেরা ভাবতেই পারে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে চাইলে বিশ্বব্যাংক নিজে থেকেই অর্থায়নে এগিয়ে আসে। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তি হয়। এখন পর্যন্ত একটি টাকাও তারা ছাড় দেয়নি। অথচ হঠাত্ দুর্নীতির কথা বলে টাকা বন্ধ করে দিল! পত্র-পত্রিকায়ও খবর এসেছে, একটি কোম্পানিকে পরামর্শক নিয়োগে তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই তারা এটা করেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে অগ্রগতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করেছি, ভূমি অধিগ্রহণ করেছি। এ কাজে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বারবার খুঁজেও সেখানে কোন দুর্নীতি পায়নি। যেখানে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচে কোন দুর্নীতি হলো না, সেখানে কোন অর্থ ছাড় না করেই কীভাবে সম্ভাব্য দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে?

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ বছরের দুর্নীতি-লুটপাট ও দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, হত্যা-খুন আর অপরাধীদের রক্ষা করাই হলো বিএনপির চরিত্র। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে, বিদেশে পাচার করেছে। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ও তার দুই ছেলে এবং অর্থমন্ত্রী সবাই মিলে দুর্নীতি-লুটপাট করেছেন। বিডিআর বিদ্রোহে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই বিদ্রোহের দুই-তিনঘন্টা আগেই বিএনপি নেত্রী কালো কাচের গাড়িতে করে কোথায় আত্মগোপনে গিয়েছিলেন? এরপর দেড়মাস কেন সেনানিবাসের বাসায় ফেরেননি? এর রহস্যও আস্তে আস্তে উদঘাটিত হচ্ছে। বিডিআর বিদ্রোহ ও সৈনিক হত্যার বিচার চলছে। এতো নিয়মতান্ত্রিক বিচার এর আগে কখনো হয়নি। অথচ এ বিচার বন্ধের জন্যও কারা সোচ্চার? কারা বিচার বন্ধ করতে আদালতে দরখাস্ত দিয়েছে? যে আইনজীবী এটা করেছে তার রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজলেই বেরিয়ে আসবে। আসলে খুনীদের বিচার নয়, খুনীদের মদদ দেয়াই হচ্ছে বিএনপির নীতি।


উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যা ওয়াদা দিয়েছি, তার চেয়েও বেশি কাজ করে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যেই এদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে দেশ- জনগণের কল্যাণে কাজ করতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শে জনগণের পাশে থাকতে হবে। স্বেচ্ছাসেবক মানে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা, সেটাও সকলকে মনে রাখতে হবে। জনগণের জন্য সরকার যেসব কাজ করেছে সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস ও ভালবাসা ছাড়া বড় নেতা হওয়া যায় না। এ আস্থা-বিশ্বাস ও ভালবাসা অর্জন করতে হবে। সম্মেলনে নিজেদেরকেই সংগঠনের পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচনের আহ্বানও জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক রাষ্ট্রপতির পরিবারই সরকার থেকে সহযোগিতা পায়। কিন্তু আমরা দুই বোন কোন কিছু নেইনি। গত সরকারের সময় শেখ রেহানার জন্য ধানমন্ডির একটি ছোট বাড়ি দেয়া হলেও খালেদা জিয়া এসে তা বাতিল করে সেখানে থানা করেছেন। আমরা পৈতৃকসূত্রে পাওয়া বাড়িটিও জনগণের জন্য দান করেছি। আর বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রী ক্যান্টনমেন্টের বিশাল অট্টালিকা ছাড়াও গুলশানে ১০ বিঘার ওপর আরেকটি বিশাল বাড়ি নিয়েছেন। নিজে আদালতে হেরে গিয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি ছাড়তে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। আর এই অবৈধ দখলকৃত বাড়ি হারানোর শোকে তাঁর (খালেদা জিয়া) ক্রন্দন দেশবাসী দেখেছে। এ রাগে তিনি হরতাল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের সাড়ে তিন বছরে প্রায় ৫ হাজার ২শ' নির্বাচন হয়েছে। একটি নির্বাচনেও কোন ধরনের গোলযোগ বা অভিযোগ উঠেনি। দেশের জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে। আমরা জনগণের ভোটের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট প্রয়োগ করতে পারে, আমরা তা প্রমাণ করেছি। কারণ আমরা জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্যই আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ এ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগের পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার। ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরাও আলাদাভাবে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন।

মোল্লা মো. আবু কাওছারের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ। সম্মেলন পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ। শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন দফতর সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ টুটুল। শুরুতে সংগঠনের সাংগঠনিক সঙ্গীত ছাড়াও দলীয় নৃত্যের সঙ্গে সম্মেলনের থিম সং, দেশাত্মবোধক ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে রচিত গান পরিবেশিত হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বইটি সংগঠনের ঢাকা জেলার নেতাদের হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে সারাদেশের নেতাদের মধ্যে এ বই বিতরণের কর্মসূচির সূচনা ঘটান প্রধানমন্ত্রী।


                       বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

No comments:

Post a Comment